শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

ডায়াবেটিস ও দাঁতের রোগ

ডায়াবেটিস ও দাঁতের রোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা মাথার চুল থেকে পায়ের নখসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। চোখ, হৃৎপি-, কিডনি, মস্তিষ্ক ছাড়াও ডায়াবেটিসের প্রভাব রয়েছে দাঁত ও মুখগহ্বরের ওপর। ডেন্টাল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়, জিনজিভাইটিস বা মাড়ি প্রদাহ, মুখে বিভিন্ন ধরনের ঘা ইত্যাদি রোগগুলো উল্লেখযোগ্য।

ডায়াবেটিস থেকে দাঁতের রোগ : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জিনজিভাইটিস বা মাড়ি প্রদাহ খুব বেশি হয়ে থাকে। আমরা জানি, রক্তনালির মাধ্যামে রক্ত প্রবাহিত হয়ে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং দূষিত পদার্থ ছাঁকন করে। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তনালি সরু হয়ে যায়। ফলে রক্তের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। কাজেই অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান যথেষ্ট পরিমাণ পৌঁছতে পারে না। ঠিক তেমনি দাঁতের মজ্জা ও মাড়ির রক্তনালির প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটিয়ে মাড়ি ফুলে গিয়ে ক্রমে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ‘শ্বেতরক্তকণিকা’, যাকে কিনা ‘দেহরক্ষী’ বলা হয়, সেটি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে প্রদাহ বারবার হয় এবং সহজে ভালো ও হয় না।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ইনসুলিন কম উৎপন্ন হওয়ায় প্রোটিনেরও ঘাটতি হয়। স্বাভাবিক টিস্যু বা কোলাজেন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই মুখের কোনো স্থানে ঘা বা প্রদাহ হলে তা সারতে দেরি হয় বা বিঘœ ঘটে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর মুখের লালার সঙ্গে গ্লুুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে এই চিনি বা গ্লুকোজ মুখে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি করে, যা কিনা দাঁতের ওপর প্রলেপের মতো থাকে। ক্রমে এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে থাকে। পর্যায়ক্রমে ক্ষয় করতে করতে দাঁতের মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তখনি অসহনীয় ব্যথা হয়, যা কান, মাথা, ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চোয়ালের হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যাওয়াও খুব প্রচলিত সমস্যা। মাড়ির প্রদাহ দীর্ঘদিন থাকলে ক্রমে পেরিওডন্টাইটিস (মাড়ির চারপাশের সব গঠনে সংক্রমণ) হয়ে যায়। ফলে হাড়ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যায় বয়সের আগেই। এসব কারণে রোগী ঠিকমতো খাবার চিবিয়েও খেতে পারে না। হজমেও সমস্যা দেখা দেয়।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর স্বাভাবিক লালার পরিমাণ কমে যাওয়ায় মুখ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে খাদ্যকণা দাঁতের সঙ্গে লেগে থেকে প্ল্যাকে পরিণত হয় এবং কালক্ষেপণে দাঁতের গোড়ায় পাথর তৈরি করে। ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে এবং মুখে দুর্গন্ধ হয়।

করণীয় : অবশ্যই রোগীর দাঁত ও মুখগহ্বর যতেœ মনোযোগী হতে হবে। দুবেলা ব্রাশ (সকালে ও রাতে খাবার পর) করতে হবে। মাউথওয়াশ বা লবণ-গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে হবে। দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকালে ধারালো কিছু দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না। এতে প্রদাহের মাত্রা বাড়ে। বরং সুতা বা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার উত্তম। যে কোনো ডেন্টাল চিকিৎসাসেবা নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারকে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ফল জানাতে হবে এবং তার পরামর্শমতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

দাঁত খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রেখে অকালে দাঁত হারিয়ে মানসিকভাবে অনেকে ভেঙে পড়েন। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। প্রতি ছমাস অন্তর ডেন্টাল চেকআপ খুব জরুরি এবং দাঁত ও মুখের যতেœ অবশ্যই একজন বিএমডিসি কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত বিডিএস ডাক্তারকে দেখাবেন। মনে রাখবেন, ‘বিডিএস নয় তো দাঁতের ডাক্তার নয়’।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877